লামা উপজেলার ফাইতংইউনিয়নে তিন ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট- ৯ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা

 


বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়ন এলাকায় UBM, SAB, BBM নামক ইটভাটায় অবৈধভাবে পাহাড় কর্তনের দায়ে- ৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান। 

বান্দরবান লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ইটভাটার মালিক অবৈধভাবে স্কেভেটর লাগিয়ে পাহাড় কেটে, মাটি বনের গাছ কেটে সংগ্রহ করেছেন। এই কারণে পার্বত্য এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের ৩০টি অবৈধ ইটভাটা এক দশক ধরে চলছে। এই অবৈধ ইটভাটাগুলির কোনটিরও লাইসেন্স নেই এবং পাহাড়ের পাদদেশ থেকে মাত্র আধা কিলোমিটারের মধ্যেই বেশির ভাগ ইটভাটার অবস্থান। এই অবৈধ ইটভাটাগুলোর কোনটিরও লাইসেন্স নেই এবং পাহাড়ের পাদদেশ থেকে মাত্র আধা কিলোমিটারের মধ্যেই বেশির ভাগ ইটভাটার অবস্থান। এই ইটভাটাগুলো পাহাড়ের মাটি ও বনের কাঠ ব্যবহার করে ইট তৈরি করে এবং এই ইটগুলো বিক্রি করে অবৈধ লাভ করে। এই প্রক্রিয়ায় পাহাড়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবংপাহাড়ের উপর বৃষ্টির পানি আস্তে আস্তে নিচে নামে। এর ফলে পাহাড়ের তলায় বন্যা ও ভূস্খলনের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও, এই ইটভাটাগুলো বিশাল পরিমাণে ধোঁয়া ও কার্বন ডাইঅইড উৎপাদন করে যা বাতাসের গুণমান ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ হয়। এই ইটভাটাগুলো পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবনধারা ও স্বাভাবিক সম্পদের উপর ক্ষতি করে। জানা যায়, উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে ৩১টি ইটভাটার মধ্যে ১৮টি ইটভাটায় আগুন দিয়েছে ভাটার মালিক। সব কয়টি ইটভাটার মালিক অবৈধভাবে স্কেভেটর লাগিয়ে পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করেছেন। এই কারণে পার্বত্য এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই অবৈধ ইটভাটাগুলোর কোনটিরও লাইসেন্স নেই এবং পাহাড়ের পাদদেশ থেকে মাত্র আধা কিলোমিটারের মধ্যেই বেশির ভাগ ইটভাটার অবস্থান। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ১৮টি অবৈধ ইটভাটার চুল্লীতে আগুন জ্বলছে। বেশির ভাগ ইটভাটায় কাটা হয়েছে পাহাড়, কিছু কিছু ইটভাটা জ্বালানি হিসাবে পুড়ানোর জন্য মজুত করা হয়েছে পাহাড়ের বনের কাঠ। চুল্লীতে আগুন দেয়া ১৮টি ইটভাটা হলো- আওয়ামী লীগ নেতা আজিমুল হক আজিমের এর মালিকানাধীন এনআরবি, মোজার মেয়ার, কবির আহমেদ ও মহিউদ্দিন গংয়ের বিবিএম, নাজমুল ইসলাম নাজুর ডিবিএম, মোক্তার মেয়ারের ইউবিএম, কবির আহমেদ ও অলি উল্লাহ'র ইউবিএম, শিকলগাটা গিয়াসের এসবিডাব্লিউ, ইউনুস ম্যানেজার ও জুনাইদ গংয়ের ফাইভবিএম, বেদার ও জলিল গংয়ের বিএমডব্লিউ, আরজু ও রিংকু গংয়ের এমএইচবি, বেলাল কোম্পানির এবিসি-৪, এনাম কোম্পানির এমবিআই, মুজিব ও ফরিদ গংয়ের ইউবিএন, বনেরকাট পুড়িয়ে অবৈধ ইটভাটার মধ্যে পেকুয়ার মহিউদ্দিনের এমবিএম, ফরিদুল আলমের এফএসি, খায়রুল মাস্টারের ফোরবিএম, মহিউদ্দিন ও শওকতের মালিকানাধীন ওয়াইএসবি ইটভাটার কোনোটির লাইসেন্স ও পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। প্রশাসন মাঝেমধ্যে এসব ইটভাটাগুলোতে অভিযান চালালেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ চোখে দেখেনি স্থানীয়রা। আইন অনুযায়ী, বনাঞ্চলের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইনে বলা আছে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে, বনাঞ্চলের দুই কিলোমিটার এবং ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়কের অন্তত আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। আইন অমান্য করলে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড, অন্যুন ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু আইন অমান্য করেই উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে খেয়াল খুশিমতো চলছে ইটভাটা বাণিজ্য। এ কারণে বেশির ভাগের কোনো ধরনের দণ্ডের মুখোমুখি হতে হয় না। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা জেলা প্রশাসকদের অনুমোদন ছাড়াই এই ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ১৮টি অবৈধ ইটভাটা।

১৯ শে মার্চ বুধবার  বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়ন এলাকায় UBM, SAB, BBM নামক ইটভাটায় অবৈধভাবে পাহাড় কর্তনের দায়ে লামা উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান পার্বত্য জেলা কার্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়।

 মোবাইল কোর্টে নেতৃত্ব দেন লামা উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট  মোঃ মঈন উদ্দিন এবং প্রসিকিউশন প্রদান করেন  মোহাম্মদ নুর উদ্দিন, পরিদর্শক, পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান পার্বত্য জেলা। 

মোবাইল কোর্টে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত-২০১০) এর ধারা ৬(খ) লংঘনের দায়ে UBM ব্রিক ফিল্ডকে ১,৫০,০০০/-(এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা, SAB ব্রিক ফিল্ডকে ২,০০,০০০/-(দুই লক্ষ) এবং BBM ব্রিক ফিল্ডকে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা করে সর্বমোট ৫,৫০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার)  টাকা জরিমানা ধার্যপূর্বক আদায় হয়।

মোবাইল কোর্ট পরিচালনা কালে পানি দিয়ে ইটভাটার চুল্লির আগুন নিভিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। উক্ত অভিযানে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন লামা বন বিভাগ, লামা পুলিশ প্রশাসন ও লামা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যগণ। পরিবেশ সুরক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর, বান্দরবান পার্বত্য জেলা কার্যালয়ের পক্ষ  থেকে এ ধরনের অভিযান অব্যহত থাকবে।


অসীম রায়( অশ্বিনী)

বান্দরবান, 01820030466

Post a Comment

أحدث أقدم
DailyKhobor.Com | ডেইলি খবর
DailyKhobor.Com | ডেইলি খবর