ময়মনসিংহ, ফুলবাড়িয়া প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় শ্রমিক দলের এক নেতার বাধায় বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ৩ ডিসেম্বর কর্তৃপক্ষ কাজ করতে গেলে উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মো. সেলিম মিয়া ও সদ্য পদচ্যুত কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম বাধা দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর অধিগ্রহণকৃত জমিতে নির্মাণকাজ শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে জমিটি বিক্রি করেননি বলে দাবি করেছেন সেলিম মিয়া।
নির্মাণকাজে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এবং স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলায় সাবস্টেশন না থাকায় বিদ্যুৎবিভ্রাট ও লো ভোল্টেজ সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।
সমস্যার সমাধানে ২০২১ সালে পৌর সদরের চকরাধাকানাই (লাহেরিপাড়া) এলাকায় ৩৩/১১ কেভি নতুন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণের জন্য এক একর জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
একই বছরের ৩১ মার্চ জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণ শেষে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করে জমি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৯ ডিসেম্বর সরকার চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন ময়মনসিংহ জোন প্রকল্প’র আওতায় এ কাজ করা হচ্ছে। গেজেট প্রকাশের পরই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করে।
জানা গেছে, স্থাপনা নির্মাণের উপযোগী করে তুলতে প্রথমে পাঁচ ফুট মাটি ভরাট করা হয়। এরপর ভবন নির্মাণের জন্য ৪০টি পাইলিংয়ে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। একইসঙ্গে ময়মনসিংহের আকুয়া ৩৩/১১ সাবস্টেশন হতে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত ১১ কেভি সোর্স লাইনের মাধ্যমে ৩০ কিলোমিটার লাইন টানানোর কাজও শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে বাধা দেওয়ার বিষয়টি সামনে এলে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হাসনান জামান খান ও সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা সরকারি কাজে বাধা না দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে চলে যান।
সরেজমিন লাহেড়িপাড়ায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মাটি ভরাট ও পাইলিং করা হলেও এখন কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। শ্রমিক দল নেতা কাজ করতে নিষেধ করায় শ্রমিকরা চলে যান। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ফুলবাড়িয়া কার্যালয়ের আবাসিক প্রকৌশলী প্রশান্ত কুমার ধর বলেন, কাজটি সম্পন্ন করা না হলে সেচ, ক্ষুদ্র শিল্প, অফিস-আদালত থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লো ভোল্টেজ সমস্যার সম্মুখীন হবে। এতে সবাই দুর্ভোগের শিকার হবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সেলিম মিয়া বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে জমি বিক্রি করিনি। কোনো অর্থও নিইনি। আমাদের জমি আমাদের থাকবে। সাবেক এমপি জোরপূর্বক আমাকে দিয়ে এটি করিয়েছেন। আমাদের তিন সন্তান প্রতিবন্ধী। তাদের জন্য আমাদের এ জমি খুবই প্রয়োজন।’
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সাবস্টেশন না থাকায় ফুলবাড়িয়ার প্রায় ১৭ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিভ্রাট এবং লো ভোল্টেজ সমস্যায় ভুগছেন। তাদের কথা চিন্তা করে কাজটি দ্রুত শেষ করার দাবি তাদের। এ বিষয়ে প্রকল্পের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হাসনান জামান খানের ভাষ্য, অধিগ্রহণকৃত স্থানে নির্বিঘ্নে শঙ্কামুক্ত হয়ে কাজ করার সহযোগিতা চেয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান বলেন, সরকারি কাজে কেউ বাধা দিতে পারবে না। সরকারি কাজে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।
إرسال تعليق